একটি আলোচিত তালিকা ও আমাদের সাংবাদিকতা: পলাশ আহসান

একটি আলোচিত তালিকা ও আমাদের সাংবাদিকতা: পলাশ আহসান

প্রকাশিত: ৯:৩৮ পূর্বাহ্ণ, জুলাই ২২, ২০২০

ক’দিন ধরেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঘুরছে কিছু পত্রিকার একটি তালিকা। যে তালিকায় দেখা যাচ্ছে কোন পত্রিকার প্রচার সংখ্যা কত এবং তারা কতজনকে কোন সূত্রে বেতন দেন।

এটি সরকারের কাছে জমা হওয়া একটা তালিকা। এই তালিকার সূত্র ধরে সরকারি নানা সুবিধা পান কর্তৃপক্ষ।সেই সুবিধা পৌঁছে যাওয়ার কথা সাংবাদিকদের কাছেও।

এরইমধ্যে আমরা দেখেছি সরকার নানাভাবে গণমাধ্যমকে সহায়তা করছে। আগেও নানাভাবে প্রণোদনার মধ্যে ছিল গণমাধ্যম। করোনার (কোভিড-১৯) আমলে নতুন কিছু সুবিধা যুক্ত হয়েছে। কিন্তু আমরা কি দেখছি? সাংবাদিকরা বেতন ভাতার দাবিতে রাস্তায় নামছেন। সাংবাদিক নেতারা জ্বালাময়ী স্ট্যাটাস দিচ্ছেন সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে।

তাহলে তালিকা করে গণমাধ্যমকে সহায়তার চেষ্টা করে কী লাভ হলো? সমস্যা কোথায়? আপাতদৃষ্টিতে মনে হচ্ছে ওই তালিকায়। কারণ তালিকা অনুযায়ী সুবিধা পেয়ে সব কিছু ঠিকঠাক চালিয়ে নেয়ার কথা ছিল।

আসুন বন্ধুরা, তালিকায় একটু চোখ বুলাই। সব মিলিয়ে এখানকার ১০-১৫টি পত্রিকার নাম আমাদের পরিচিত। আরও গোটা পাঁচেকের কথা শোনা যায়। তালিকায় অজ্ঞাত কিছু পত্রিকার নাম দেখা যাচ্ছে। কিন্তু এদের প্রচার সংখ্যা আকাশ ছোঁয়া।

ওই ১০-১৫টি পরিচিত পত্রিকা বাদে বেশির ভাগের প্রচার সংখ্যা এবং কর্মচারীর বেতন দেওয়ার সূত্রটা যে ভুয়া এটা বোঝার জন্যে খুব জ্ঞানী হওয়ার দরকার নেই। ওই সব পত্রিকা এবং প্রচার সংখ্যা শুনে যে কারোরই হাসাহাসি করার বোধ আছে। শুধু বোধ নেই, যাদের এই তালিকা যাচাই করার কথা ছিল তাদের।

অথচ এই চৌর্যবৃত্তির ফাঁদে পড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে নিয়মিত গণমাধ্যমগুলো। কারণ তারা পত্রিকা বের করার কাগজ কেনার সুবিধা নিয়ে সেই কাগজ অন্য কোথাও বিক্রি করছে। কর্মীদের দীর্ঘ তালিকা করে তাদের নামে সুবিধা নিচ্ছেন।সরকারি বিজ্ঞাপনের ভাগ নিচ্ছেন।

এরপরও বেতন দিচ্ছেন অল্প যে ক’জনকে। সেখানেও দুর্নীতি। তাদের সই করান ৩০ হাজারে, দেন ১৫ হাজার। কোন কোন প্রতিষ্ঠানে তাও বকেয়া। অথচ এদের সরকারের সীমিত প্রণোদনার ভাগ চাই ১৬ আনা।

আমি আসলে সবার জানা তথ্য আরেকবার বললাম। আশ্চর্য হচ্ছে সবাই সব জানে কিন্তু প্রতিকার নেই। এক রকম তালিকা হবে, আর চলবে অন্যভাবে। যেন এটাই নিয়ম। কিন্তু কোভিড দিনে বহু গুণী সাংবাদিকের অসহায়ত্ব দেখলে আর চুপ থাকা যায় না। মাথার মধ্যে হাতুড়ির ঘা পড়ে।

আমি খুব সহজেই এই চক্র দমনের রাস্তা দেখতে পাই। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারিত তালিকাটিই হতে পারে প্রধান সূত্র। সন্দেহজনক প্রত্যেকের অফিসে গিয়ে কাগজ পত্র চাইলেই হবে। খাতায় অনেকে মিথ্যাচারের শিল্পরূপ দিতে পারেন। সমস্যা নেই। সংবাদপত্র পরিবেশক সমিতি আছে তাদের কাছে ঠিকঠাক প্রচার সংখ্যাটাই আছে।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে, কারা এই হিসাব চাইবে? হিসাব চাওয়ার একটা কর্তৃপক্ষ তো ছিলই। তারা কেন ঠিকঠাক হিসাব নিলো না? যারা কাজটি করেননি তাদেরই আবার নতুন করে সেই দায়িত্ব দেয়ার কোন মানে আছে বলে আমার মনে হয় না। এই হিসাব নেয়ার জন্যে রীতিমত টাস্কফোর্স দরকার। এই দলে সরকারি কর্মকর্তারা যেমন থাকবেন, তেমনি থাকবেন সাংবাদিক প্রতিনিধিও।

তবে সাংবাদিকদের মধ্যে যারা ইউনিয়নের নির্বাচন করেন, তাদের হিসাব চাওয়ার দলে না রাখলেই মঙ্গল। তাহলে তারা প্রভাবমুক্ত হয়ে সংবাদপত্রের অভ্যন্তরীণ অনিয়মের বিষয়গুলো আমলে আনতে পারবেন।

গণমাধ্যম চালানোর নামে কারো কারো মিথ্যাচার বহু পুরোনো। এতদিন সেসব হয়তো সহ্য করা গেছে। কিন্তু এখন করোনা দিনে যেখানে টাকার অভাবে একের পর এক গণমাধ্যম বন্ধ হয়ে যাচ্ছে সেখানে এই অপরাধ সহ্য করাটাও অপরাধ। আরেকটি কথা না বললেই নয়। সেটা হচ্ছে,এতসব করে কেন গণমাধ্যমের সঙ্গে আছে? এর উত্তর শুধু কী সুবিধা চুরি?

গণমাধ্যমের শক্তি ব্যবহার করে আরেকজন সাহেদ হওয়া নয়তো? যে টাস্কফোর্সের প্রস্তাব আমি দিলাম, সেই দল ঠিকঠাক কাজ করলে এরকম একটি জটিল প্রশ্নেরও উত্তর বের হয়ে আসার সম্ভাবনা রয়েছে।


লেখকঃ পলাশ আহসান
      গণমাধ্যম কর্মী


 

ভুলুয়াবিডি/এএইচ

নিউজটি শেয়ার করুন।