এ লজ্জা রাখি কোথায়!

এ লজ্জা রাখি কোথায়!

প্রকাশিত: ৯:৫৭ পূর্বাহ্ণ, আগস্ট ২৩, ২০২০

মরণাপন্ন একজন মানুষ, মরণব্যাধি ক্যানসারে আক্রান্ত। হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে ধুঁকে ধুঁকে শুধু মৃত্যুর প্রহর গুণছিলো। এরই মধ্যে জানলেন তার কলিজার টুকরা ও সদ্য কৈশরে পা দেয়া যার বয়সটি হলো মুক্ত বিহঙ্গ চঞ্চলা হরিণীর ন্যায় ডানা মেলে ওড়ে বেড়ানো মাঠের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে হৈ হুল্লোড়ে মেতে থাকা ও সহপাঠিদের সাথে যে এখনও পরম মমতায় বাবার কাঁধে ঝুলে পথ চলার মাঝে আহ্লাদের সুরে আব্দার করবে, বাবা, ঈদে আমাকে একসেট লাল জামা আর নীল চুঁড়ি কিনে দিবে তো?

যে এখনও মা’কে জড়িয়ে ধরে আদর স্নেহ ভালোবাসা আর কচি মুখের নরম কন্ঠস্বরে বলবে, মাগো আমাকে একটু খাইয়ে দাও না! সেই ছোট্ট কিশোরী বালিকাটি সমাজের কিছু সংখ্যক পাপিষ্ঠ নরাধমদের নির্মম নিষ্ঠুর লালসার শিকার হয়েই নিষ্কৃতি পায়নি, হয়েছে কুলাঙ্গাদের চরম জিঘাংসার শিকার। খুবই নৃশংসভাবে খুন করেছে ওই নরপিশাচরা অসহায় মেয়েটিকে।

বলছি লক্ষ্মীপুর হামছাদি ইউনিয়নের হতভাগিনী হীরামনির কথা। আজ থেকে প্রায় আড়াই মাস আগে নরঘাতকদের নির্মম নিষ্ঠুরতার বলি হয়েছিল হীরামনি। ধর্ষক ও খুনীদের বিচারের দাবিতে সোচ্চার হয়েছিলেন সমাজের সর্বস্তরের জনতা। প্রশাসনের পক্ষ থেকে আশ্বাস দেয়া হয়েছিল ন্যায় বিচারের। জানি না আইনী প্রক্রিয়া কোন পর্যায়ে আছে।

আল্লাহর কি অপার লীলা। শনিবার (২২ আগস্ট) জানতে পারি হতভাগিনী স্কুলছাএী হীরামনির ক্যানসারে আক্রান্ত বাবা হারুন ইন্তেকাল করেছেন, “ইন্না-লিল্লা-হি অ ইন্না ইলাইহি র-জ্বিউ’ন”। বড্ড কষ্ট লাগলো তার মৃত্যু সংবাদে।আল্লাহর কাছে কায়মনোবাক্যে দোয়া করি, হতভাগা এই বাবা’কে তিনি যেনো জান্নাতুল ফিরদাউস দান করেন।

মানুষ হিসেবে আজ আমি লজ্জিত, খুবই লজ্জিত। কারণ, একজন বাবা তার আদরের পুত্তুলির ধর্ষকের বিচার দেখে যেতে পারেনি। এ লজ্জা কার? নিশ্চয়ই আপনার আমার সকলের। এ লজ্জা পুরো সমাজের। এ লজ্জা রাষ্ট্রের। এর দায় এড়াতে পারে না প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলাবাহিনী। দায় এড়াতে পারি না আমরা কেউই।

প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর কাছে আমাদের আকুল আবেদন, অতি দ্রুত স্কুলছাএী হিরামনির ধর্ষক ও খুনীদের কঠোর থেকে কঠোরতর শাস্তি দেয়া হোক।

উল্লেখ্য; লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলা গোপিনাথপুর এলাকায় গত ১২ জুন শনিবার নবম শ্রেণির স্কুলছাত্রী হিরামনিকে বাড়ীতে একা পেয়ে ধর্ষণের পর শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়।

পুলিশ জানিয়েছেন, শনিবার সকালে নানার বাড়ি থেকে পালেরহাট প্রাইভেট উচ্চ বিদ্যালয় নবম শ্রেণির স্কুলছাত্রী হিরামনি সদর উপজেলা পশ্চিম গোপীনাথ নিজ বাড়িতে আসে। এর কয়েকদিন আগে হিরামনিকে নানার বাড়িতে রেখে ক্যানসার আক্রান্ত অসুস্থ বাবাকে চিকিৎসার জন্য তার মা ঢাকায় নিয়ে যায়।

শনিবার সকালে অসুস্থ বাবাকে হাসপাতালে দেখভাল করতে ঢাকা যাওয়ার জন্য সে বাড়িতে আসে ওই ছাত্রী। কিন্তু বিকেলে নিজের ঘরের ভিতরে দূর্বৃত্তরা তাকে একা পেয়ে জোরপূর্বক ধর্ষনের পর শ্বাসরোধে হত্যা করে পালিয়ে যায় ঘাতকরা।

এরপর তার সাড়া শব্দ না পেয়ে প্রতিবেশীর ঘরের ভিতরে তার লাশ দেখে পুলিশকে খবর দেয়। পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে নিহতের লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠায়।


লেখকঃ আব্দুর রব ছিদ্দিকী
সাধারণ সম্পাদক
রায়পুর যুব কল্যাণ সমিতি, ঢাকা


 

ভুলুয়াবিডি/এএইচ

নিউজটি শেয়ার করুন।