মুক্তিযোদ্ধা মাওদামিন কথা ছিলো একটি পতাকা পেলে… ভুলুয়া বাংলাদেশ ভুলুয়া বাংলাদেশ ডেস্ক প্রকাশিত: ৯:০১ অপরাহ্ণ, জুলাই ৭, ২০২০ ১৯৭১ মহান মুক্তিযুদ্ধে প্রায় এিশ লাখ শহীদ ও নাম না জানা কতশত মা-বোনের ইজ্জের বিনিময়ে স্বাধীনতার গৌরব অর্জন করেছি আমরা। তাই আজ হাসিমুখ নিয়ে বলতে পারি আমরা স্বাধীন দেশের স্বাধীন নাগরিক। আমরা কয়েকশ’ বছর পরাধীন থাকার পর বাংলাদেশ নামে একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম দেশের জন্ম হলো ১৯৭১ সালে। ১৯৭১ সালের আগে কেউ ভাবেইনি বাংলাদেশ স্বাধীন হবে। বরং সেই সময়ের জ্ঞানী-গুণী-পণ্ডিতদের মনে আমাদের স্বাধীনতা নিয়ে বেশ নেতিবাচক ধারণা ছিলো। মহান মুক্তিযুদ্ধে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সেইদিন জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানেরা জীবনের পরোয়া না করে কেউ কেউ মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলো আবার কেউ কেউ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের লাশ বহন করার দায়িত্বে ছিলেন। দেশ স্বাধীনের এতগুলো বছর পর আজ জানতে পারলাম তেমনই একজন মুক্তিযোদ্ধা মাওদামিন ভাইকে। স্যালুট মুক্তিযোদ্ধা মাওদামিন ভাইকে। তিনি লক্ষ্মীপুরের রায়পুর রাখালিয়া গ্রামের বাসিন্দা। জানা গেছে, ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে তিনি ছিলেন একজন রিকশা চালক। প্রায় মুক্তিযোদ্ধাদের লাশ নিয়ে তাঁর জেলার সবখানে আসা যাওয়া ছিলো। তাঁর সম্পর্কে আর বেশি কিছু জানার সুযোগ হয়নি আমার। দুই’শ বছরের ব্রিটিশ শাসন, ২৪ বছরের পাকিস্তানি শাসন শোষণের পর স্বাধীনতা অর্জন করে বাংলাদেশ। গৃহীত হয় স্বাধীন দেশের সংবিধান। এই সংবিধান অনুসারে দেশের প্রতিটি নাগরিককে সমমর্যাদা দেয়া হয়। দুঃখজনক হলেও সত্যি যে, দেশের বর্তমান প্রজন্ম স্বাধীনতা লাভের পেছনের রক্তক্ষয়ী ইতিহাস জানে না। সে ইতিহাস তেমনভাবে জানানোর মতো ব্যবস্থা খুব একটা নেই। অনেকেই মোটা দাগে বলে, ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়। নয় মাস যুদ্ধের পর ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর দেশ চূড়ান্ত বিজয় অর্জন করে। কেউবা ত্রিশ লাখ শহীদ আর দু’ লাখ মা-বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি- এমন একটা বাক্য যোগ করে। স্বাধীনতার সংগ্রাম কোত্থেকে শুরু হয়েছিল, পরাধীন দেশে তখন আমরা কেমন ছিলাম, কারা কীভাবে স্বাধীনতার এই সংগ্রাম শুরু করলো, কারা যুদ্ধ করলো, কীভাবে যুদ্ধ হলো, অস্ত্র পেলো কোথায়, ট্রেনিং পেলো কোথায় এসব প্রশ্নের বিস্তারিত উত্তর আমরা অনেকে জানি না। জানতে-জানাতেও চায় না অনেকে! না, আমরা এই বিষয়গুলো কখনও তেমনভাবে তলিয়ে দেখি না। গভীরভাবে ভাবি না, আমাদের উপলব্ধির মধ্যে নিই না। আমরা এখন অনেকটা হেলাফেলা স্বাধীনতাকে দেখি। অনেককে এমনটাও বলতে শুনেছি, হ্যাঁ, ত্রিশ লক্ষ লোক শহীদ হয়েছেন, আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি,তাতে কী? আসলে এর জন্য আমাদের পূর্ব-প্রজন্ম যেমন দায়ী, দায়ী আমরাও। সঠিক ইতিহাস সবিস্তারে আমরা কেউই শিখিনি, শেখাতে পারিনি। এক’দু খণ্ডিত বাক্যে যে ইতিহাস বর্ণনা করেছি তা প্রকৃত সত্য তুলে ধরার জন্য মোটেও যথেষ্ট নয়। আর ইতিহাস বিকৃতকারীরা সচেতনভাবে স্বাধীনতার কথা বা ইতিহাস বিকৃত করে গেছে এবং এখনও করে যাচ্ছে। কথা ছিল একটি পতাকা পেলে জাতীয় সংগীতের সুরে গাইবে তৃপ্তির গান। কথা ছিল একটি পতাকা পেলে বাঁচবে যুদ্ধের শিশু সসম্মানে সাদা দুধে-ভাতে’ (হেলাল হাফিজ)। সেসব এখনও দূর-অস্ত। আমাদের স্বাধীনতা এসেছে দুই’শ বছরের ব্রিটিশ শাসন ও চব্বিশ বছরের পাকিস্তানি শোষণ বঞ্চনা সমস্ত কূটিলতাকে পরাজিত করেই। এই সোয়া দুই’শ বছরের নৃশংস আর্থিক লুটপাট, মানুষের বিরোধবিদ্রোহকে হিংস্রতায় রক্তপাতে ডুবিয়ে দেওয়ার চেষ্টা তো ছিলই, কিন্তু এখন তো আরও স্পষ্ট তার থেকে আরও ভয়ঙ্কর আমাদের অতীতের বিকৃত ইতিহাস কথন। এ পরিস্থিতিতে তাই প্রতিরোধ জরুরি। মানুষের রুটি-রুজি রক্ষায় বিভাজন, মেরুকরণের বিরুদ্ধে গণতন্ত্রের জন্যে গগনভেদী উচ্চারণ। তাই তো বলতে চাই- হেলাল হাফিজের স্বপ্নের শিশুরা বেঁচে থাক, মানুষের ঐক্য আর সংহতিতে সুন্দর হোক প্রিয় স্বদেশভূমি। লেখক: আলমগীর হোসেন বার্তা সম্পাদক: ভুলুয়া বাংলাদেশ infoalam.bd82@gmail.com পোস্টটি দেখা হয়েছে- ৪৭৬ শেয়ার করুন গণমাধ্যম শেয়ার করুন