তৃতীয় দফা বন্যার আঘাত তৃতীয় দফা বন্যার আঘাত ভুলুয়া বাংলাদেশ ভুলুয়া বাংলাদেশ ডেস্ক প্রকাশিত: ৭:৫৮ পূর্বাহ্ণ, জুলাই ২২, ২০২০ বন্যার কারণে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়ে কলাগাছের ভেলায় আশ্রয়কেন্দ্রে যাচ্ছেন দুই নারী। ছবিটি রাজবাড়ী সদর উপজেলার বরাট ইউনিয়নের চরকাঁচরন্দ এলাকা থেকে তোলা। দ্বিতীয় দফা বন্যার মধ্যেই আঘাত হেনেছে তৃতীয় দফা বন্যা। গত কয়েকদিন নদ-নদীর পানি কিছুটা কমে ফের বাড়তে শুরু করেছে। ভারি বর্ষণ আর উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের পাশাপাশি এবার ডুবতে শুরু করেছে দেশের মধ্যাঞ্চল। বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে ঢাকার নিম্নাঞ্চল। প্রবল বর্ষায় গতকাল তলিয়ে যায় রাজধানী ঢাকার অধিকাংশ এলাকা। নতুন করে বন্যার পানিতে ডুবেছে টঙ্গী, রাজবাড়ী, শরীয়তপুর, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ ও মানিকগঞ্জের বিস্তীর্ণ এলাকা। উত্তর-পূর্বাঞ্চলের জেলাগুলোর পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ। করোনার মহামারীর মধ্যে টানা বন্যায় অবর্ণনীয় দুর্ভোগে পড়েছে লাখ লাখ মানুষ। তলিয়ে গেছে বাসস্থান, নেই পর্যাপ্ত খাবার ও বিশুদ্ধ পানি, নেই রান্নার জায়গা। বন্যার পানির সঙ্গে দীর্ঘদিনের যুদ্ধে চর্মরোগসহ নানারকম পানিবাহিত রোগে ভুগছেন বানভাসিরা। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের তথ্যানুযায়ী, গতকাল সকাল নাগাদ ১০১টি পর্যবেক্ষণাধীন পানি সমতল স্টেশনের ৭২টিতে পানি বৃদ্ধি পায়। অপরিবর্তিত ছিল ৪টিতে। ১৭টি নদ-নদীর পানি ২৮টি পয়েন্টে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। এরমধ্যে পদ্মার পানি গোয়ালন্দ পয়েন্টে বিপৎসীমার ১০৫ সেন্টিমিটার, ধলেশ্বরীর পানি এলাসিন পয়েন্টে ১০৮ সেন্টি মিটার ও আত্রাইয়ের পানি বাঘাবাড়ি পয়েন্টে ১০০ সেন্টি মিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। দুদিনের ব্যবধানে নতুন করে চারটি নদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করেছে। বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদফতর ও ভারত আবহাওয়া অধিদফতরের গতকালের পূর্বাভাস অনুযায়ী, আগামী ২৪ থেকে ৭২ ঘণ্টায় বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চল, উত্তর-পূর্বাঞ্চল, দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চল ও তৎসংলগ্ন ভারতের হিমালয় পাদদেশীয় পশ্চিমবঙ্গ, আসাম, মেঘালয় ও ত্রিপুরা প্রদেশে ভারি থেকে অতিভারি বৃষ্টিপাত হতে পারে। এতে ব্রহ্মপুত্র-যমুনা, উত্তরাঞ্চলের ধরলা ও তিস্তা, উত্তর পূর্বাঞ্চলের আপার মেঘনা অববাহিকার প্রধান নদ-নদী সমূহ ও দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের পাহাড়ি অববাহিকার নদ-নদীর পানি সমতলে দ্রুত বৃদ্ধি পেতে পারে। বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের তথ্যমতে, ঢাকা জেলার আশপাশের নদীসমূহের পানি সমতলে আগামী ৪৮ ঘণ্টা পর্যন্ত অব্যাহত বাড়তে পারে। এদিকে সিলেট ও সুমানগঞ্জের বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হতে পারে। একই অবস্থায় থাকবে কুড়িগ্রাম, বগুড়া, জামালপুর, সিরাজগঞ্জ, টাঙ্গাইল, মানিকগঞ্জ, নাটোর, মুন্সীগঞ্জ, ফরিদপুর, মাদারীপুর, রাজবাড়ী, শরীয়তপুর ও ঢাকা জেলার নিম্নাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতি। বিভিন্ন জেলার বন্যা পরিস্থিতি লালমনিরহাট: ভারতে গজলডোবার সব গেট খুলে দেয়ায় আবারও লালমনিরহাটে তিস্তার পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তিস্তা ও ধরলার পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় লালমনিরহাটের ৫টি উপজেলার ৬৩টি চরাঞ্চলে আবারও বন্যা দেখা দিয়েছে। সেই সঙ্গে শুরু হয়েছে প্রবল ভাঙন। গত ২৪ ঘণ্টায় তিস্তা-ধরলার ভাঙনে ৪৩টি বসতবাড়ি নদীগর্ভে হারিয়ে গেছে। তিস্তা ব্যারাজ রক্ষার্থে ৪৪টি গেট খুলে দিয়ে পানির প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করছেন পাউবো। জানা গেছে, গত ৭ দিন আগে তিস্তার ভয়াবহ বন্যার পর চতুর্থ দফায় আবারও তিস্তা-ধরলা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে লোকালয়ে প্রবেশ করছে। মানিকগঞ্জ : পানিতে তলিয়ে গেছে মানিকগঞ্জ পৌরসভার অনেক এলাকা। হঠাৎ পানি চলে আসায় চরম বিপাকে পড়েছে ওই এলাকার মানুষ। পৌর এলাকার ২নং ওয়ার্ডের নারাঙ্গাই উঁচুটিয়া এলাকায় পানিবন্দী হয়ে পড়েছে অনেক পরিবার। এই এলাকার প্রধান সড়কটি ডুবে গেছে। রাস্তার বিভিন্ন স্থানে দেখা দিয়েছে ভাঙন। এলাকাবাসী জানায়, ছোট্ট একটি কালভার্ড দিয়ে পানি প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হওয়ায় রাস্তাটি ভেঙে গেছে। মাত্র একমাস আগে রাস্তাটি পাকা করা হয়েছে। মুন্সীগঞ্জ : উজান থেকে নেমে আসা পানিতে মুন্সীগঞ্জের বন্যা পরিস্থিতি আরও নাজুক হয়েছে। জেলার ভাগ্যকুল পয়েন্টে গতকাল পদ্মার পানি বিপৎসীমার ৭২ সেন্টিমিটার এবং মাওয়া পয়েন্টে ৬৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল, যা বিগত কয়েকদিনের মধ্যে সর্বোচ্চ। টঙ্গিবাড়ী, লৌহজং ও শ্রীনগর উপজেলা ১৩টি ইউনিয়নের অধিকাংশ এলাকা পানিতে ডুবে গেছে। ডুবে গেছে ঘর- বাড়ি, রাস্তাঘাট।পানিবন্দী রয়েছে ৪৫টি গ্রামের ৩২ হাজার অধিক মানুষ। বেশ কিছু এলাকায় দেখা দিয়েছে ভাঙন। সুনামগঞ্জ: ভারি বর্ষণ ও উজানের ঢলে গত ২০ দিনের ব্যবধানে তৃতীয় দফা বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টিতে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। জেলার প্রধান প্রধান নদ-নদীর পানি বিপৎসীমার ওপরে রয়েছে। জেলায় গত ২৪ ঘণ্টায় ১৪০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। প্লাবিত হচ্ছে নতুন নতুন এলাকা।জেলার ৮৭টি ইউনিয়নের মধ্যে ৮৩টি ইউনিয়ন ও চারটি পৌরসভা বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছে। বন্যার কারণে সড়ক ভেঙে যাওয়ায় জেলা সদরের সঙ্গে ছাতক, দোয়ারাবাজার,তাহিরপুর ও জামালগঞ্জ উপজেলা সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে।গবাদিপশু নিয়ে বিপাকে পড়েছেন মানুষ। অনেক এলাকায় খাবারের পানির চাহিদা রয়েছে। বন্যাকবলিত এলাকায় অন্তত দুই শতাধিক আশ্রয় কেন্দ্র খুলেছে প্রশাসন। হবিগঞ্জ : জেলার আজমিরীগঞ্জে পাহাড়ি ঢলে কুশিয়ারা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। টানা বর্ষণে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন। তলিয়ে গেছে সদর উপজেলা থেকে বিভিন্ন ইউনিয়নে যাওয়ার রাস্তঘাট। এ ছাড়া আজমিরীগঞ্জ ভায়া শিবপাশা রাস্তার শান্তিপুর এলাকায় প্রায় ১ কিলোমিটারে ভাঙনের সৃষ্টি হয়েছে। এদিকে ২ নম্বর বদলপুর ইউনিয়নের পাহাড়পুর থেকে কাদিরগঞ্জ যাওয়ার রাস্তায় নিকলীর ঢালা নামক স্থানের বাঁধটি যে কোনো সময় ধসে যেতে পারে। রাজবাড়ী : বন্যার প্রভাবে রাজবাড়ীতে পানিবন্দী হয়ে পড়েছে ১১ হাজার পরিবারের প্রায় ৪৫ হাজার মানুষ। গোয়ালন্দ উপজেলা প্রশাসন এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। পানিবন্দী এলাকার মানুষ ঘর ছেড়ে রাস্তার পাশে এবং আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছে।তবে পর্যাপ্ত ত্রাণ সহায়তার পাশাপাশি বিশুদ্ধ পানি ও গো-খাদ্য সংকট চরম আকার ধারণ করেছে। টঙ্গী : গাজীপুরের টঙ্গীতে বিভিন্ন এলাকায় বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে বাড়িঘর ও রাস্তাঘাট। বৃষ্টির পানি সরতে না পেরে টঙ্গী তুরাগ নদের আশপাশের অধিকাংশ বাড়িঘর ডুবে গেছে। টঙ্গী ৪৭ নম্বর ওয়ার্ড শিলমুন, মরকুন, মুদাফা, গুটিয়া, দত্তপাড়া, এরশাদনগর, বনমালাসহ যেসব এলাকা ঘিরে তুরাগ নদী রয়েছে সেসব এলাকা পানিতে তলিয়ে গেছে। টঙ্গী স্টেশন রোড, পূর্ব থানার গেট, টঙ্গী সরকারি হাসপাতাল গেট, কলেজ গেট, আরিচপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। শরীয়তপুর : পদ্মার পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। প্লাবিত হচ্ছে নতুন নতুন এলাকা। শরীয়তপুরের নড়িয়া-জাজিরা, ভেদরগঞ্জ ও শরীয়তপুর সদর উপজেলা পদ্মার তীর তলিয়ে যাওয়ায় তীরবর্তী ৪ উপজেলার ২৩ ইউনিয়ন ও পৌরসভার ২৪ হাজার পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে কয়েকশ মাছের ঘের, পানের বরজ ও ফসলি জমি। নওগাঁ : ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধ মেরামতে নওগাঁ পানি উন্নয়ন বোর্ডের দ্রুত উদ্যোগের কারণে এবারের মতো বন্যার হাত থেকে রক্ষা পেয়েছে রানীনগর ও আত্রাই উপজেলার প্রায় দুই শতাধিক গ্রাম। তবে নতুন করে নওগাঁর নদীগুলোতে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় আরও বড় বন্যার আশঙ্কা করছে পাউবো। নারায়ণগঞ্জ : গতকাল সকাল থেকেই টানা বৃষ্টিতে তলিয়ে গেছে নারায়ণগঞ্জের অনেক এলাকা। বৃষ্টিতে নগরীর প্রধান প্রধান সড়ক ছাড়াও বিভিন্ন সংযোগ সড়কেও পানি জমে গেছে। কোথাও কোথাও দেখা যায় হাঁটুপানি। সারাদিনেও পানি নামতে না পারায় চরম ভোগান্তিতে পড়েছে নগরীর বাসিন্দারা। ভুলুয়াবিডি/এএইচ নিউজটি শেয়ার করুন। পোস্টটি দেখা হয়েছে- ২২৪ শেয়ার করুন প্রাকৃতিক দূর্যোগ শেয়ার করুন তৃতীয় দফা বন্যার আঘাত