ফাইল: ছবি

বাগেরহাটের ফকিরহাটে মিলছে ৫’শ টাকায় ভাতা কার্ড

প্রকাশিত: ৩:৫০ অপরাহ্ণ, জুন ২৬, ২০২০

সাগর মল্লিক,ফকিরহাট প্রতিনিধি: বাগেরহাটের ফকিরহাট পিলজংগ ইউনিয়নের সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর বিশেষ বরাদ্দের আওয়তায় বয়স্ক, বিধবা ভাতা’সহ প্রতিবন্ধী ভাতা প্রদানে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ ছাড়াও বয়স্ক বিধবা ও প্রতিবন্ধী ভাতা নির্বাচনে দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে।

তাছাড়া বই জমা দেয়ার সময় অফিস খরচের কথা বলে ৫’শ করে টাকা নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। ফকিরহাট উপজেলায় বয়স্ক ও বিধবারা প্রতি মাসে ৫’শ টাকা হারে এবং প্রতিবন্ধীরা প্রতিমাসে সাড়ে ৭’শ টাকা হারে ৩ মাস পর এ টাকা পাবেন।

পিলজংগ ইউনিয়নের ৫ নং ওয়ার্ডের নিমাই শীল অধিক বয়স্ক একজন বৃদ্ধ, চোখে তেমন দেখেন না। পরিবারের সদস্যদের ওপর ভড় করে তার চলাফেরা। সাথে কথা হলে তিনি বলেন, পিলজংগ ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য সাধন কুমার দে বয়স্ক ভাতা কার্ড বাবদ ৫’শ টাকা গ্রহণ করে। এবং বলেন,কার্ড করতে গেলে টাকা দিতে হয়।

একই ওয়ার্ডের খলিলুর রহমানের সাথে কথা হলে তিনি বলেন,আমাদের ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য সাধন কুমার দে আমার থেকে ৫’ টাকা নিয়েছে কার্ড করার জন্য। সাধন ভুক্তভোগী খলিলুর রহমানকে বলেছেন, ৫’শ টাকা দাও কার্ড করে দিচ্ছি।

আবার নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেকেই বলেছেন, টাকা দিতে ব্যর্থ হওয়ায় অনেক অতিদরিদ্র বৃদ্ধ-বৃদ্ধা, বিধবা ও প্রতিবন্ধী ভাতা প্রাপ্তির সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়েছে। শুধু তাই নয়, ভিজিডির কার্ডের চাল আনতে গেলেও কেয়ারিং খরচ বাবদ দিতে হয় ১০ টাকা করে।

আবার অনেকেই আছে অর্থ সম্পত্তি থাকা সত্ত্বেও ভাতা কার্ড বহন করছে। কিন্তু অনেক অসহায়-অসচ্ছল পরিবার আছে যারা ইউপি সদস্যদের চাহিদা অনুযায়ী টাকা দিতে না পারায় কার্ডের মালিক হতে পারেনি।

এখানেই শেষ নয়….! সরেজমিনে অনুসন্ধান করতে গিয়ে জানা যায়, ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডেও হয়েছে এমন অবৈধ বাণিজ্য। ৬ নং ওয়ার্ডের মৃত নূর মোহাম্মাদ বিশ্বাস এর স্ত্রী হামিদা বেগম আবেদন করেছিলেন বিধবা ভাতা প্রাপ্তির জন্য। আবেদনের বিপরীতে ইউপি সদস্য মোস্তফা কামাল হারুন নিয়েছে ২’শ টাকা।

এদিকে হামিদা বেগমের সাথে কথা হলে তিনি জানিয়েছেন কাগজপত্র জমা দেয়ার সময় আমার কাছ থেকে ২’শ টাকা নিয়েছিলো। আমাকে বলেছিলো কাগজ পত্র জমা দেবার সময় ২’শ টাকা জমা দেওয়া লাগে।

একই ওয়ার্ডের শাহাজাহান সর্দারের ছেলে মো. ইমরান সর্দার একজন প্রতিবন্ধি। ইমরান সর্দারের সাথে কথা হলে সাংবাদিকদের বলেন, আমাদের ওয়ার্ডের মহিলা মেম্বার শাহানাজ পারভীন পাখী আমার থেকে কাগজপত্র নিয়ে বলেছে, আমাকে টাকা দেবে। এর জন্য আমার থেকে ২’শ টাকা নিয়েছিলো একাউন্ট খোলার কথা বলে। এ ছাড়া সই করার জন্য নিয়েছিলো ৫০ টাকা।

শুধু চারজন ভুক্তভোগীই নয়, ইউনিয়নের প্রতিটি ওয়ার্ডে রয়েছে এমন দুর্নীতির ছোঁয়া। ইউনিয়নের সাধারণ মানুষের দাবি, অনিয়মের দিক থেকে পিলজংগ ইউনিয়ন রয়েছে শীর্ষে। পিলজংগ ইউনিয়ন ইউপি সদস্য , ইউনিয়ন পরিষদ সচিব, ো তথ্যসেবা কেন্দের উদ্যোগক্তা মৌসুমি’সহ পলাশ চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে এ সকল অভিযোগ পাওয়া গেছে।

সাংবাদিকদের দেখে স্থানীয় অনেক সাধারণ মানূষ জানিয়েছে তাদের ক্ষোভের কথা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেকেই বলেছেন, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান খান শামীম জামান পলাশের যোগসাজশে দুর্নিতী করে যাচ্ছে মৌসুমী সহ ইউপি সদস্যরা।

এব্যাপারে পিলজংগ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান খান শামীম জামান পলাশের সাথে কথা বলার জন্য তার মূঠোফোনে বারবার দেবার পরো তিনি ফোন ধরেননি।

ইউনিয়নের উদ্দোক্তা মৌসুমীর বিরুদ্ধে এর আগেও অনেক দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ থাকা সত্তেও বহাল তবিয়াতে পরিষদে কাজ করে যাচ্ছেন। দুই চারটি বিষয়ে নই, সরকারের প্রতিটি উন্নয়ন মূলক কর্মকান্ডে দূর্নিতীর ছোয়া লেগেছে অত্র ইউনিয়নে।

এমনটাই দাবি করছেন ইউনিয়নের সাধারণ মানুষেরা। ইউনিয়নে বিতরণকৃত বিধবা ভাতা,বয়স্ক ভাতা, প্রতিবন্ধি ভাতা,ভিজিডি কার্ডের জন্যও অবৈধভাবে অফিস খরচের নাম করে এভাবেই অর্থ আদায় করে আসছে ইউনিয়নের হর্তাকর্তারা।

ফকিরহাট উপজেলা সমাজসেবা অফিসার সবুর আলী সাংবাদিককে জানান, ভাতা কার্ড সুবিধাভোগীর একাউন্ট খোলা বাবদ ১০ টাকা প্রদান করতে হয়। ১০ টাকার বেশি নেওয়া হয় এমন কেউ যদি আমাদের কাছে অভিযোগ করেন তবে তদন্ত স্বাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান স্বপন দাশ’র সাথে কথা হলে তিনি বলেন, ফকিরহাটে কোন প্রকার দূর্নিতী আমরা মেনে নিবোনা। যদি কারো বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ আসে তাহলে সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যাবস্থা গ্রহণ করবো খুব দ্রুত।

বাংলাদেশ সরকার উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় অদম্য শক্তি নিয়ে যখন এগিয়ে চলছে, ক্ষুদা এবং দারিদ্র মুক্ত সোনার বাংলা বিনির্মাণে কাজ করছে ঠিক তখনি কিছু সংখ্যক অসাধু ইউপি চেয়ারম্যান-সদস্যদের যোগসাজশে গরিবের অর্থ লোপাট করছে।

এমন অসাধু ইউপি চেয়ারম্যান-সদস্যদের অচিরেই কঠিন শাস্তির আওতায় আনার দাবি সাধারণ মানুষের। এমন পদক্ষেপ গ্রহণেই সোনার বাংলা গড়া সম্ভব হবে বলে মনে করছেন সচেতন মহল।

 

ভুলুয়াবিডি/এএইচ