ব্যাংকারদের বেতন-ভাতা কমছে

প্রকাশিত: ১০:১৭ অপরাহ্ণ, জুন ১৫, ২০২০

করোনাভাইরাসের কারণে অর্থনৈতিক সংকট দেখিয়ে ব্যাংক কর্মীদের বেতন-ভাতা ও ইনক্রিমেন্ট কমানোর পরামর্শ দিয়েছে ব্যাংক মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকস (বিএবি)।

চিঠিতে ৪০ হাজার টাকার বেশি বেতনধারী সব গ্রেডের কর্মকর্তা ও নির্বাহীদের বেতন ১৫ শতাংশ কমানোর পরামর্শ দিয়েছে। বিএবি‘র পক্ষ থেকে সংগঠনের বিভিন্ন ব্যাংকের চেয়ারম্যানের কাছে পাঠানো এক চিঠিতে এই পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে ব্যাংকে ব্যাংকে কর্মীদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। বিভিন্ন মহলে চলছে সমালোচনার ঝড়।

এর আগে, গত সপ্তাহে বেসরকারি খাতের সিটি ব্যাংক লিমিটেড তাদের সব কর্মীর বেতন ১৬ শতাংশ কমানোর ঘোষণা দেয়। এছাড়াও এবি ব্যাংকও তাদের কর্মীদের বেতন ৫ থেকে ৬ শতাংশ পর্যন্ত কমানোর ঘোষণা দিয়েছে।

এদিকে বিএবি‘র চিঠি পেয়ে বিভিন্ন ব্যাংকের কর্মীদের মাঝে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। এ ব্যাপারে একাধিক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলেও তারা কেউ কথা বলতে রাজি হননি।

বিএবির চিঠিতে আগামী ১ জুলাই থেকে ২০২১ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত চলতে ১৩ দফা পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এসব পরামর্শের মধ্যে রয়েছে- মাসিক ৪০ হাজার টাকার বেশি গ্রস বেতনধারী কর্মকর্তাদের বেতন ১৫ শতাংশ পর্যন্ত কমানো, ব্যাংকে সব ধরনের প্রমোশন, ইনক্রিমেন্ট ও ইনসেনটিভ বোনাস বন্ধ রাখা, ব্যাংকে চলমান নিয়োগসহ সব ধরনের নিয়োগ বন্ধ রাখা, নতুন শাখা, এজেন্ট ব্যাংকিং ও সাব-ব্রাঞ্চ বন্ধ রাখা, সব প্রকার Fixed Asset কেনা বন্ধ রাখা, সব ধরনের স্থানীয় ও বিদেশি প্রশিক্ষণ ও বিদেশ ট্যুর বন্ধ রাখা এবং সিএসআর, অনুদান ও চ্যারিটি বন্ধ রাখা।

এছাড়াও সুপারিশমালায় বলা হয়েছে, পত্রিকা (প্রিন্ট ও অনলাইন) ও টেলিভিশনে সব ধরনের বিজ্ঞাপন, সব কাস্টমার গেট টুগেদার এবং অফিসার এক্সিকিউটিভ গেটটুগেদার ও ম্যানেজার কনফারেন্স বন্ধ রাখা। পাশাপাশি বড় ধরনের ব্যয়, যেমন-হার্ডওয়্যার, সফটওয়্যার ইত্যাদি কেনা সীমিত পর্যায়ে রাখা এবং অন্যান্য ব্যয় সীমিত পর্যায়ে রাখা।

বিশ্বব্যাপী কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে ব্যাংকিং খাত নানা সমস্যার মুখে পড়ায় এসব পরামর্শ দেওয়া হয়েছে বলে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়। এছাড়াও চিঠিতে ব্যাংক খাতের ১৩টি সমস্যার কথা তুলে ধরা হয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে- ব্যাংকের বিনিয়োগ উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যাওয়া, বিনিয়োগের উপর সুদের হার কমে যাওয়া, রিকভারি শূন্য অবস্থায় চলে আসা, ওভারডিউ বাড়তে থাকা, এক্সপোর্ট-ইমপোর্ট কমে যাওয়া ইত্যাদি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা অনুসারে এপ্রিল ও মে মাসে ব্যাংক কর্মীদের প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে বলেও চিঠিতে বলা হয়েছে। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ব্যাংক কর্মীদের চিকিৎসার ব্যয়, মৃতদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কারণে ব্যাংকের আয় কমে গেছে বলেও উল্লেখ করা হয়েছে।

একাধিক ব্যাংকারের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, করোনার মহামারিতে এমনিতেই আতঙ্কের মধ্যে রয়েছেন। যেকোনো সময় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হতে পারেন। এমন পরিস্থিতিতে ঝুঁকি নিয়ে কাজ করছেন। এখন যদি ব্যাংক বেতন-ভাতা কমায় তাহলে তাদের ওপর এটি বাড়তি মানসিক ও অর্থনৈতিক চাপ ছাড়া কিছুই না।

তারা জানান, মাসিক বেতন একটা বাজেটের মধ্য দিয়ে খরচ করতে হয়। এখন হঠাৎ করে বেতন কমানো হলে জীবনযাত্রার ব্যয় মেটাতে হিমশিম খেতে হবে। ব্যাংকগুলো প্রতি বছর শত শত কোটি টাকার মুনাফা করে।

যার পেছনে কাজ করেন কর্মীরাই। ব্যাংক তো লসে নেই যে কর্মীর বেতন-ভাতা কমাতে হবে। মহামারির কারণে ব্যবসা কিছুটা কমবে। তবে লোকসান হবে না।

তাই এ ধরনের আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত এ খাতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করবে। এই মুহূর্তে কর্মী ছাঁটাই বা বেতন-ভাতা না কমানোর দাবি জানিয়েছেন ব্যাংকাররা।

 

ভুলুয়া বাংলাদেশ/এমএএইচ