লক্ষ্মীপুরে কৃষককে গাছে বেঁধে নির্যাতন!

লক্ষ্মীপুরে কৃষককে গাছে বেঁধে নির্যাতন

প্রকাশিত: ৯:৩৭ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ২, ২০২০

নিজস্ব প্রতিনিধি: লক্ষ্মীপুরে চুরির অপবাদ দিয়ে এক কৃষককে গাছের সাথে বেঁধে বর্বর নির্যাতনের ঘটনায় ১০ দিন পর ইউপি চেয়ারম্যানসহ ৮ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।

মঙ্গলবার (০১ সেপ্টেম্বর) দিনগত রাতে নির্যাতিত কৃষক আমীর হোসেন বাদী হয়ে স্থানীয় চররমনী ইউনিয়ন এর চেয়ারম্যান আবু ইউসুফ ছৈয়াল ও ইউপি সদস্য স্বপনকে অভিযুক্ত করে মামলায় ৮ জনকে আসামী করা হয়েছে।

পুলিশ জানায়, সদর থানায় মামলার পর ওই এলাকায় অভিযান চালিয়ে জুলহাস, সাইফুদ্দিন ও লেদু মুন্সিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অন্য আসামীদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।

এরআগে ২৩ আগস্ট সোমবার রাতে কৃষক আমীর হোসেন বাজার হতে বাড়ী ফেরার পথে প্রতিবেশী সোহাগ, জুলহাস, আরিফ হোসেন ও দেলু নামে কয়েকজন ব্যাক্তি মিলে তাকে আটক করে চুরির অপবাদ দিয়ে গাছের সাথে বেঁধে বর্বর নির্যাতন চালায়।

পরে শোর চিৎকারে পরিবারের লোকজন এগিয়ে এলে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আবু ইউসুফ ছৈয়াল ও ইউপি সদস্য স্বপনকে খবর দেয় তারা।

এরপর ইউপি সদস্য স্বপনের বাড়িতে নিয়ে একটি সালিশ বৈঠকের আয়োজন করে চেয়ারম্যান। ওই বৈঠকে তাকে বেধম মারধর করা হয়। এসময় কৃষক আমীর হোসেন জ্ঞান হারিয়ে ফেললে হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাকে।

কৃষকের স্ত্রী ও সন্তানরা জানিয়েছেন, দীর্ঘদিন ধরে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আবু ইউসুফ ছৈয়াল তাদের কাছে ২০ শতক জমি দিতে চাপ সৃষ্টি করে। উক্ত জমি না দেওয়ায় ক্ষীপ্ত হয়ে চেয়ারম্যানের নির্দেশে চুরির অপবাদের নাটক সাজিয়ে গাছের সাথে বেঁধে বর্বর নির্যাতন চালানো হয়। যা কোনোভাবে মেনে নিতে পারছেন না তারা।

এ ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি জানিয়ে কৃষক আমীর হোসেনের হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা চালিয়ে যান তারা। এরপর কিছুটা সুস্থ হলে এ ঘটনার আসল হোতা ইউপি চেয়ারম্যান আবু ইউসুফ ছৈয়াল ও ইউপি সদস্য স্বপনকে অভিযুক্তসহ ৮ জনকে মামলায় আসামী করা হয়। পুলিশ ৩ জনকে গ্রেফতার করলেও এ ঘটনার মূল হোতা ইউপি চেয়ারম্যানের গ্রেফতার দাবি জানিয়েছেন তারা।

স্থানীয়রা জানান, কৃষক আমির হোসেনকে চুরির করার অভিযোগ দিয়ে গাছের সাথে বেঁধে এমন করে নির্যাতন চালানো কোনোভাবে মেনে নেয়ার মতো না। এটি সভ্য সমাজে হতে পারে না। এ বিষয়ে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান তারা।

সদর হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার ডা. আরমানুর রহমান অপু জানান, কৃষক আমির হোসেনের শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহৃ রয়েছে। চিকিৎসা চলছে। ভালো হতে সময় লাগবে। সালিস বৈঠক বসিয়ে তার ওপর যা হয়েছে তা রীতিমতো অন্যায় করা হয়েছে।

সদর উপজেলার চররমনী মোহন ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবু ইউসুফ ছৈয়াল জানান, এলাকায় আরও কয়েকটি চুরির ঘটনায় আমীর হোসেনের নামে অনেকে তার নিকট অভিযোগ করেন। তবে মালামাল নিয়ে এ পর্যন্ত কারও বাড়িতে চুরি করতে গিয়ে ধরা পড়েনি আমীর হোসেন।

তবে চোর সন্দেহে কিছুদিন আগে লোকজন আটক করে মারধর করে। বিষয়টি শুনার পর তিনি স্বপন মেম্বারের বাড়িতে যান খোঁজ নিতে। সেখানে যারা তাকে নিতে আসে তাদের নিকট থেকে সাদা কাগজে স্বাক্ষর রেখে ছেড়ে দেয়া হয়। তাদের সাথে জমির বিষয়ের সাথে জড়িত নয় বলে দাবি করেন তিনি।

সদর থানার ওসি তদন্ত মো. মোছলে উদ্দিন জানান, সদর উপজেলা চররমনীমোহন এলাকায় চুরির অপবাদে গাছের সাথে বেঁধে বর্বর নির্যাতনের ঘটনায় স্থানীয় চেয়ারম্যান ও মেম্বারসহ ৮ জনকে অভিযুক্ত করে থানায় মামলা হয়েছে। ওই মামলায় এ পর্যন্ত ৩ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাকী আসামীদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।

 

ভুলুয়াবিডি/এএইচ

নিউজটি শেয়ার করুন।