লক্ষ্মীপুরে ভুল অস্ত্রপাচারে ২০ লাখ টাকার ক্ষতিপূরণের দাবিতে উকিল নোটিশ

লক্ষ্মীপুরে ভুল অস্ত্রপাচারে ২০ লাখ টাকার ক্ষতিপূরণের দাবিতে উকিল নোটিশ

প্রকাশিত: ৮:৩৮ পূর্বাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ১, ২০২০

লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি: লক্ষ্মীপুরে মিলেনিয়াম হাসপাতাল প্রা: লি: কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে রোগীকে ভুল অস্ত্রোপাচার করার অভিযোগে ২০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ চেয়ে লিগ্যাল নোটিশ প্রদান করেছে ক্ষতিগ্রস্থ পরিবার।

সোমবার (৩১ আগস্ট) দুপুরে জেলা জজ কোর্টের উকিল মো. রাছেল মাহমুদ ভুইঁয়া মান্না এ তথ্যটি নিশ্চিত করেন।

তিনি জানিয়েছেন, ক্ষতিগ্রস্থ পরিবার লক্ষ্মীপুর জেলার কমলনগর উপজেলার মধ্য চর মাটিন এলাকার জসিম উদ্দিনের পক্ষে তিনি মিলিনিয়াম হাসপাতাল’র পরিচালক মো. ইব্রাহিমসহ ওই হাসপাতালে চিকিৎসক মো. নুর আলম মোহিমের নিকট ক্ষতিপূরণ দাবি তুলেন।

এর আগে ২৩ আগস্ট ক্ষতিগ্রস্থ পরিবার মো. এরশাদ এর বড় ভাই জসিম উদ্দিন ক্ষতিপূরণ ও অভিযুক্তদের বিচারের দাবিতে লক্ষ্মীপুর সিভিল সার্জন বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগে ডা. নুর আলম মহিম, মিলেনিয়াম হসপিটাল, আল-আমিন প্যাথলজী এন্ড কনসালেটেশন সেন্টার ও আনোয়ারা মেডিকেল সার্ভিসেস লিঃ কর্তৃপক্ষকে অভিযুক্ত করা হয়।

অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, গত ২১ আগস্ট শুক্রবার মো. এরশাদ (২৫) অসুস্থ হলে তাকে লক্ষ্মীপুর মিলেনিয়াম হসপিটাল (প্রা: লি:) নেওয়া হয়। সেখানে ডা. নুর আলম মহিম পরীক্ষা শেষে বলেন, তার ডান হাতের পিঠে (বাহু) অংশে চর্বি টিউমার হয়েছে। রোগের জন্য দ্রুত অপারেশন করতে হবে। তখন তাকে হাসপাতালে ভর্তি দেন। রাত ৮টায় ডাক্তার এরশাদের অপারেশন করেন।

অপারেশনের পরে ডাক্তার বলেছেন, যে রোগের কারণে অপারেশন করা হয়েছে সে মূলত ওই রোগে আক্রান্ত নয় তার হাড় টিউমার হয়েছে। তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় নেওয়ার পরামর্শ দেন।

অভিযোগ পত্রে আরও উল্লেখ করা হয়, গত ২৭/১০/১৯ সালে ডা. মহিম তার ভাইয়ের রোগ শনাক্ত করণের জন্য লক্ষ্মীপুর হাসপাতাল রোডস্থ আল-আমিন প্যাথলজী এন্ড কনসালটেশন সেন্টারে প্রেরণ করেন। পরের সপ্তাহে আল আমিন প্যাথলজী ওই টেস্টের রিপোর্ট দেন।

সেখানে এরশাদের টেষ্ট রেজাল্টে লাইপোমা ধরা পড়ে। কিন্তু ডাক্তার অপারেশন শেষে বলেন টেষ্ট রিপোর্ট ভুল আসছে।রোগীকে অস্ত্রোপাচার করার পর শরীরের ভিতরে কোন (লাইপোমা) না থাকায় সেলাই করে দেওয়া হয়।

জানা গেছে, লক্ষ্মীপুরে মিলেনিয়াম হাসপাতাল প্রা: লি: হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের পরামর্শে কর্তব্যরত চিকিৎসক ও ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের কনসালটেন্ট সার্জন ডা: নুর আলম মহিম সাথে ৫০ হাজার টাকার চুক্তিতে কমলনগরের জসিম উদ্দিনের ভাই এরশাদ হোসেন ডান হাতের চর্বি অস্ত্রোপাচার করে ভাল করার চুক্তি করা হয়। এরপর অস্ত্রপাচার শেষে রোগীর হাতের পিঠে কোনো ধরনের টিউমার মিলেনি বলে স্বজনদের জানান সার্জারি বিশেষজ্ঞ ডা. নুর আলম মহিম।

এদিকে ভুল টেষ্ট রিপোর্ট, এক বছর আগের টেষ্ট রিপোর্ট এর ভিত্তিতে ভুল অস্ত্রোপাচার করা ও লিখিত কোনো প্রেসক্রাইব না করায় ডাক্তার, প্যাথলজী ও হাসপাতালের বিরুদ্ধে তদন্ত করে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি জানিয়েছেন ভূক্তভোগী পরিবারসহ স্থানীয়রা।

এ ঘটনায় টেষ্ট রিপোর্ট ভুল এসেছে দাবী করে ডা: নুর আলম মহিম উল্টো অভিযোগ করে বলেন, টেস্ট রিপোর্ট এর ভিত্তিতে অস্ত্রোপাচার করা হয়েছে। তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের কনসালটেন্ট তার বিরুদ্ধে এখনো পর্যন্ত কেউ অভিযোগ তুলতে পারেনি। তিনি চুক্তি ভিত্তিতে অনেক করেছেন। রুগীরা ভাল হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, যে রিপোর্টের ভিত্তিতে তিনি অস্ত্রোপাচার করেছেন সেই টেস্ট এর রিপোর্ট ভুল ছিল। তার অস্ত্রোপাচারে কোন ভুল ছিলনা।

এদিকে টেস্ট রিপোর্ট দেওয়া প্রতিষ্ঠান আল আমিন প্যাথলজীর স্বত্বাধিকারী মো. শাহাদাত হোসেন বলেন, ডাক্তারের হাতে নেওয়া টেষ্ট স্যাম্পল তারা ঢাকায় প্রেরণ করেন। ঢাকা আনোয়ারা মেডিকেল সার্ভিসেস থেকে প্রাপ্ত রিপোর্ট রোগীকে দিয়েন তারা। কোনো ভুল থাকলে তার দায় আনোয়ারা মেডিকেল এর হবে। তাদের কোনো দায় নেই।

লক্ষ্মীপুর সিভিল সার্জন ডা. আব্দুল গাফফার জানান, তিনি অভিযোগ পত্র পেয়েছেন। এবিষয়ে তদন্ত প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। তদন্তে সত্যতা পেলে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানান তিনি।

 

ভুলুয়াবিডি/এএইচ

নিউজটি শেয়ার করুন।