সাংসদ আটকের ঘটনা লজ্জাজনক ভুলুয়া বাংলাদেশ ভুলুয়া বাংলাদেশ ডেস্ক প্রকাশিত: ১০:৪৪ পূর্বাহ্ণ, জুন ৮, ২০২০ কুয়েতে মানব পাচারের মামলায় অভিযুক্ত লক্ষ্মীপুর-২ আসনের স্বতন্ত্র সাংসদ কাজী শহিদ ইসলাম পাপুলকে আটক করার ঘটনা লজ্জাজনক বলে উল্লেখ করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন। তার মতে, সারা বিশ্ব যখন মানবপাচারকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছে, এমন সময়ে সাংসদের আটকের খবর শুধু লজ্জাজনক নয়, আমাদের জন্য দুর্ভাগ্যজনক। গত রোববার (৭ জুন) রাতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, কুয়েতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এস এম আবুল কালাম লক্ষ্মীপুরের সাংসদ পাপুলকে আটকের বিষয়টি টেলিফোনে ঢাকায় জানিয়েছেন। যদিও কুয়েতের কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশকে এ নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে রোববার পর্যন্ত কিছু জানায়নি। এর আগে শনিবার রাতে কুয়েত সিটির মুশরিফ আবাসিক এলাকার বাসা থেকে কুয়েত সিআইডির কর্মকর্তারা কাজী শহিদকে তাদের দপ্তরে নিয়ে যায়। আব্দুল মোমেন বলেন, কুয়েতে থেকে রাষ্ট্রদূত আমাকে জানিয়েছেন লক্ষীপুর-২ আসনের স্বতন্ত্র সাংসদ কাজী শহিদ ইসলাম আটক হয়েছেন বলে শুনেছেন। সেখানকার সিআইডি তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিয়ে গেছে। সাংসদ কুয়েতে একটি বড় প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত আছে ওই প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান যিনি কুয়েতের নাগরিক, সাংসদকে জামিনে মুক্ত করার জন্য তিনি চেষ্টা করছেন। সাংসদকে কেন নেয়া হয়েছে জানতে চাইলে কুয়েতের কর্তৃপক্ষ কিছু জানায়নি বলেও রাষ্ট্রদূত জানিয়েছেন। তবে ওনার বিরুদ্ধে মুদ্রা পাচার ও মানবপাচার অভিযোগ কেউ দিয়েছে। যেহেতু তিনি বড় ধরনের ব্যবসা পরিচালনা করেন, সেখানে তার সঙ্গে অন্যদের ব্যবসায়ী প্রতিদ্বন্দ্বিতাও রয়েছে বলেও উল্লেখ করেন কুয়েতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এস এম আবুল কালাম। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এই ঘটনা সত্যি হয়ে থাকলে খুবই দুঃখজনক। বিদেশে গিয়ে একজন সাংসদ এ ধরণের অপরাধমূলক কর্মকান্ডে জড়াবেন তা কোনোভাবেই গ্রহনযোগ্য নয়, অনভিপ্রেত। তিনি বলেন,এমন সময় এ ঘটনাটা ঘটেছে যখন পৃথিবীর সব দেশ মানবপাচারকারীদের বিরুদ্ধে খড়গহস্ত। এমন সময়ে সাংসদ পাপুলের বিরুদ্ধে অভিযোগ আসাটা অত্যন্ত দুঃখজনক। আমরা এতে লজ্জিত। উল্লেখ্য; চলতি এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে মানবপাচারকারী সিন্ডিকেটগুলোর বিরুদ্ধে কুয়েত সরকার সাঁড়াশি অভিযান শুরু করে। ধরপাকড় শুরু হলে নতুন একটি কোম্পানির নাম আলোচনায় চলে আসে। ওই কোম্পানি দশ হাজার কর্মী কুয়েতে নিয়ে তাদের কাছ থেকে দুই কোটি দিনার আদায় করেছে। ওই সময় লক্ষ্মীপুর-২ সংসদ সদস্য কাজী শহীদ ইসলাম পাপুলের নামে কুয়েতে মানবপাচারে হাজার কোটি টাকার কারবারের অভিযোগ উঠে এসেছে। তাকে নিয়ে কুয়েতের গণমাধ্যম রিপোর্টও প্রকাশ করেন। তবে কুয়েত দেশটিতে গ্রেফতার অভিযান শুরুর আগেই এমপি পাপুল দেশে চলে আসেন বলে কুয়েতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়। সম্প্রতি সময়ে দেশটির নিরাপত্তা বাহিনী একটি অভিযোগ পাওয়ার পরেই পুরো বিষয়টি প্রকাশ্যে চলে আসে। জানা যায়, সরকারের সঙ্গে চুক্তি করে প্রবাসী ও বাংলাদেশি শ্রমিকদের নিয়ে যেতে প্রত্যেকের কাছ থেকে দুই হাজার ও আবাসিক খরচ ৫০০ কুয়েতি দিনার আদায় করা হয়েছে। এদিকে কুয়েতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে উদ্ধৃত করে দেশটির দৈনিক পত্রিকা আল-কাবাস জানায়, অর্থ পাচার ও মানব পাচারের সাথে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে এক বাংলাদেশিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তার পরিচয় এখনও নিশ্চিত করা যায়নি। পত্রিকার ওই প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, গ্রেফতার ওই ব্যক্তি ৩ জনের একটি গ্যাংয়ের সদস্য। গ্যাংয়ের অন্য দুই সদস্য আগে থেকে বিপদ আচ করতে পেরে দেশ থেকে পালিয়েছেন। আল কাবাস আরও জানায়, এই ৩ ব্যক্তি দেশটির বড় বড় ৩টি কোম্পানির অত্যন্ত গুরুত্ত্বপূর্ণ পদে রয়েছেন। তাদের মাধ্যমে ২০ হাজারেরও বেশি বাংলাদেশি শ্রমিক কুয়েতে গেছেন। বিনিময়ে ৫ কোটি দিনারেরও বেশি আদায় করেছেন তারা। কুয়েতে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসের কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে যে, পত্র-পত্রিকাতে যে বাংলাদেশি নাগরিকের কথা বলা হচ্ছে তিনি লক্ষ্মীপুর-২ আসনের এমপি শহীদ ইসলাম পাপলু। সবশেষ জাতীয় নির্বাচনে ১৪ দলীয় জোট ও জাতীয় পার্টির সমঝোতার মাধ্যমে মনোনয়ন পেয়েছিলেন জাতীয় পার্টির প্রার্থী মোহাম্মদ নোমান। আওয়ামীলীগের মনোনয়ন চেয়েছিলেন পাপুল। দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে তিনি স্বতন্ত্র নির্বাচন করেন। পরে এক পর্যায়ে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান জাতীয় পার্টির প্রার্থী। আলোচনা ছিল মোটা এক অংকের অর্থের বিনিময়ে পাপুল ওই প্রার্থীকে নির্বাচন থেকে সরিয়ে দেন। এ বিষয়টি নির্বাচনের সময়ই বেশ আলোচিত ছিল। ভুলুয়া বাংলাদেশ/এএইচ পোস্টটি দেখা হয়েছে- ২০৮ শেয়ার করুন জাতীয় শেয়ার করুন